পরশ্রীকাতরতা

“পরশ্রীকাতরতা ও বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মাঝে মিশে রয়েছে ।ঈর্শা ,দ্বেষ সব জাতিতেই কিছু কিছু রয়েছে কিন্তু বাঙ্গালির রয়েছে পরশ্রীকাতরতা “
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ( তথ্যসূত্র "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" ।)


“ মোষের যেমন রয়েছে সিং ,মৌমাছির আছে হুল ,গ্রীক সংগীতে রয়েছে নারীর সৌন্দর্য, ঠিক তেমনি বাঙ্গালীর বিশেষত্ব হলো প্রতারণা ।প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার সুন্দর অজুহাত দেখানো ,প্রতারণা ,মিথ্যা হলফ জালিয়াত এসব তারা আত্মরক্ষার্থে ও অন্যের ক্ষতিসাধনের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে দ্বিধা বোধ করে না গাঙ্গেয় নিম্নাঞ্চলের মানুষেরা(বাঙ্গালী জাতি )
– টামাস বাবিংটন ম্যাকলে ।
কথাগুলো যে হারে হারে সত্য সেটা না মেনে উপায় নেই কিন্তু বর্তমান দুনিয়ার এসে বাঙ্গালীর এ পরশ্রীকাতরতার বাধ ভেঙ্গে গিয়েছে ।তাদের ঈর্শার সীমা শুধুমাত্র পাশের বাসায় ভাবীর নতুন টেলিভিশন আনা দেখেই সীমাবদ্ধ নেই ।তারা এখন মানুষেরত মৃত্যু নিয়েও ব্যাপক পরশ্রীকাতরতায় ভোগে ।খুব বেশী দূরের কোনো উদাহরণ টানবো না ।মাস তিনেক আগে বলিঊডের উঠতি তারকা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর খবর শোনার পর ভারতীয় চলচিত্র অঙ্গন ও বৈদেশিক চলচিত্র অঙ্গনের মতো বাংলাদেশেও সুশান্তের অনুসারীর মাঝে শোকের ছা্যা দেখা যায় ।তারা তাদের শোক প্রকাশের জন্য বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়াতে যেমন ফেসবুক ,টুইটার ,ইন্সট্রাগ্রামে নিজেদের শোক প্রকাশ করেছে ।সবকিছুই স্বাভাবিক ছিলো ।কিছু কট্টরপন্থী ইসলাম ও সাধারণ ইসলাম অনুসারীরা এটাকে ধার্মিক দিক থেকে বর্জন করলো । যদিও বাএই বিষয়টি মেনে নেয়া খুবই সহজ ।কারণ ধর্মের ব্যাপারে নাক গলানো মানে কিছু কিছু মৌলভির মতে জাহান্নামের টিকিট কেটে ফেলা ।যদিও সেসকল মৌলবি সকালে ফরজের নামাজটি ঠিক মতো আদায় করেছে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান ।তবে যাই হোক এরপর শুরু হয় আসল কাহিনী ।ওইযে বলেছেন গুনীজন বাঙ্গালী জাতি আর কিছুতে চ্যাম্পিয়ন হোক বা না হোক পরশ্রীকাতরতার ক্ষেত্রে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানের মুকুট ঘরে নেয়াটাই বাকি ।সেটাই করলো এবার তারা ।তাদের কাছে এই মৃত্যুটা অনেকটা ফেইম পাবার মতো কিছু একটা হয়ে গেলো ।এই মৃত্যুটাকে নাকি ওভাররেটেড লেগেছে তাদের কাছে ।মানে আজকাল যে কিছু দুটাকার দেহ দেখানো মডেল অভিনেতাদের মতো মৃত্যু জিনিসটাও অভারেরটেড হয় সেটা এই বাঙ্গালী জাতিকে না দেখলে বোধয় বুঝতাম না ।বিশ্ববাসী আর কিছু শিখুক বা না শিখুক এইভাবে একটা মানুষের মৃত্যুকে কীভাবে ফেইম পাবার মাধ্যম ও অভাররেটেড ট্যাগ বানানো যায় সেটা তো শিখতে পারবে আমাদের থেকে ।এরপর এরা তুলনা শুরু করলো একে একে সুশান্তের মৃত্যুর সাথে অন্যদের মৃত্যুর ।,আমার প্রশ্ন হলো দুনিয়াতে প্রতি বছর কোটি কোটি মানুষ মরছে তাদের সবার মৃত্যুর খবর স্বভাবতই আমরা জানবো না ।আরেকটা বিষয় পরিলক্ষিত করতে পারবেন যে ,যদি আপনার পরিচিত বা আপন কেও মারা যায় তাহলে আপনার হৃদয়ে যেমন কষ্ট লাগবে সেটা আপনার সাধারণ কোনো বন্ধুর কোনো দূরের আত্মীয় মারা গেলে পাবেন না ।জিনসটা অনেকটাই এমন ।বাংলাদেশ বংশোদ্ভত তরুণ উদ্যোক্তা ফাহিম মারা যাবার পর যেনো বাঙ্গালী তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশের থেকে তার মৃত্যুর সাথে সুশান্তের মৃত্যুর তুলনায় উঠে পড়ে লাগলো ।কিন্তু যারা এমনটি করেছেন তাদের ৫০% বাঙ্গালী নিজেও জানতো না, কে এই ফাহিম ।তারা জীবনে কখোনো প্রয়জনও বোধ করেনি এই ফাহিম সম্পর্কে জানতে ।হয়তবা ফাহিমের মৃত্যু এতোটা শোকাচ্ছন করতো না সাধারণ মানুষের যদি না তারা পরশ্রীকাতরতার বশবর্তী হয়ে সুশান্তের মৃত্যুর সাথে তুলনায় উঠে পড়ে লাগতো ।আচ্ছা যেসকল বাঙ্গালী এই তরুন উদ্যোক্তা ফাহিমের মৃত্যুর সাথে সুশান্তের মৃত্যুর তুলনা দিয়েছে তারা কি জানতেন যে ফাহিমের মৃত্যুর পাশাপাশি সে সময় বাংলাদেশের অন্যতম সর্ববৃহৎ গ্রুপ ,ট্রান্সকম গ্রুপের মূলহোতা জনাব লতিফুর রহমান মারা গেছিলেন ।তার ব্যাক্তি জীবন প্রত্যেকটা উদ্যোক্তার কাছে আদর্শ হওয়া উচিত ।বাংলাদেশ সরকার থেকে” কর বাহাদূর “উপাধীও পেয়েছিলেন ।এদেশের ব্যবসার নতুন দোর খুলেছিলেন এই লতিফুর রহমান ।সংবাদ পত্র ও সাংবাদিকদের জীবনেও রেখেছিলেন অসীম ভূমিকা ।দৈনিক প্রথম আলো ও দ্যা ডেইলি স্টার পত্রিকার বিরাট অংশ তারই ।আরও অনেক অর্জন ছিলো তার জীবনে তা লিখে শেষ করা যাবে না ।কিন্তু অন্তত আমার ফ্রেন্ড লিস্টে একজন মানুষকেও দেখিনি জনাব লতিফুর রহমান নিয়ে সামান্য একটা পোস্ট দিয়ে শোক বার্তা জানাতে ।কারন এতে হয়তবা তারা ফেইম পাবে না বা ,ভাইরাল করতে পারবে না ।কারন এর থেকে বড় টপিক ফাহিম ছিলো তাদের কাছে ।উপরে আত্মীয়র উদাহরণ দিয়েছি ।এখানকার তরুন উদ্যোক্তা ফাহিম ,শিল্পপতি লতিফুর রহমান ও অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত প্রত্যেকের জীবনের কাজের ক্ষেত্র ভিন্ন ।তারা সেসকল কাজের মাধ্যমে জনগনের যত কাছে গেছে সেসকল জনগনই তাদের ভালোবাসা ও শোক বেশী প্রকাশ করেছে ।আর চলচিত্র জগতের হবার জন্য স্বাভাবিকভাবেই সুশান্তকে বেশী মানুষ জানবে ।কারণ দিনশেষে বিনোদনের জন্য ফোন ,ল্যাপটপ বা টিভির সামনে বিনোদনের জন্য মুভি ,সিরিজ গুলোই দেখি আমরা ,কোনো শেয়ার বাজারের খোজ নেই না ।তাই দয়া করে সুশান্তের মৃত্যুর সাথে ফাহিম বা লতিফুর রহমানের মৃত্যুর তুলনা দিয়ে নিজের পচে যাওয়া মস্তিষ্কের পরিচয় দিবেন না ।
আরেকটি বিষয় বলতে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম ।বেশ কদিন আগে ইমাম হোসেইন নামে এক ছেলে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সুইসাইড করলো ।সেটা অনলাইনে ভাইরাল হলো । এখানেও যেনো বাঙ্গালীর পরশ্রীকাতরতার এক ভয়ংকর রূপ ফুটে উঠলো । তাদের কাছে মৃত্যুটা যেনো ভাইরাল আর ফেইম পাবার মজার খেলা হয়ে উঠলো ।এবার বাঙ্গালী যে কাজ করলো সেটা আসলে দেখে যেকোনো সুস্থ্য মস্তিষ্কের মানুষ বাকরূদ্ধ হয়ে যাবার কথা ।তারা তাদের মতে এই “ ভাইরাল “ সুইসাইডের সাথে এক অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল ছেলের ছবি সারা বাংলাদেশে ভাইরাল করে দিতে উঠে পড়ে লাগলো ।একটি বার ভাবলো না যে ভাইরাল হবার ফলে সেই দরিদ্র শিক্ষার্থীর জীবনে এটা কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেললো না ইতিবাচক ।যদি মনে করে থাকেন এতে সে গর্বে নাচানাচি শুরু করছে তাহলে আপনি ভূল ।হয়তবা দরিদ্যের হীনমন্যতা আগে চার দেয়ালের মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো এখন সেটা সারা বাংলাদেশ জানলো ।আপনি যদি সত্যি তার কোনো উপকার করতে চাইতেন তাহলে আড়ালে তাকে সাহায্য করতেন এভাবে সারা বাংলাদেশের মাঝে তার দারিদ্রতাকে তুলে ধরে তাকে অপমান করতেন না ।ইমাম সুইসাইড করতে এতে আপ[নাদের চলকানি ,কিন্তু আপনার শেয়ারের ফলে যে সেই ছাত্রটি হীনমন্যতায় ভুগবে না তার কোনো গ্যারান্টি আছে ? কাল যদি সে সুইসাইড করে মনে রাখবেন এর পেছনে ,দায়ী থাকবে আপনি , আর আপনাদের পচে যাওয়া চিন্তাভাবনা ।
শেষে আরেকটা বিষয়ে বলতে চাই যারা অন্যের সুইসাইডের পেছনে থাকা ডিপ্রেশনের কারণের সাথে নিজের ডিপ্রেরশনের তুলনা দেয় ,তাদের ডিপ্রেশনকে যেনো কোনো ডিপ্রেশনই মনে হয় না তাদের কাছে ।এটাও অনেকটা পরশ্রীকাতরতা ।ডিপ্রেশনের কোনো ক্লাসিফিকেশন নেই ।আমাদের সবার আবেগের ক্ষেত্র এক না ।এক বিষয়ের আপনারর যেমন পরিমানে ডোপামিন ,সেরোটোনিন ক্ষরণ হবে আমার একই পরিমানে হবে না সে বিষয়ে বা ক্ষেত্রে ।তাই আরেকজনের ডিপ্রেশনকে জাজ না করে পারলে তার বিপদে পাশে দাড়ান নইলে অফ যান ।

Post a Comment

0 Comments