শর্টফিল্মঃজ্ঞানান্ধ
( মূলত স্ক্রিপ্ট সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণা নেই ।শখেই বসে চেষ্টা করছি একটা অখাদ্য লিখার ।জানি না সহ্য করার মতো হবে কিনা ।গল্পের মূল প্লট রাকিবুল ইসলাম সৈকতের ।)
প্রথম দৃশ্যঃদেয়ালের উপর দুটি ছায়ামূর্তি ।একটি ছায়ামূর্তি অনবরত আরেকটি ছায়ামূর্তির উপর হাতুরি চালিয়ে যাচ্ছে ।দেয়ালেই রক্তের ফিনকির ছিটা বোঝা গেলো ।কিছুক্ষন পরে মেঝেতে পড়ে যায় লাশটি ।রক্তের ধারা বেয়ে আতাতায়ীর পায়ের কাছে ঠেকলো ।আতাতায়ী হাটুগেরে বসে থেতলে যাওয়া লাশের দিক তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন ।কালো মাস্ক দিয়ে আতাতায়ীর মুখ ঢাকা । গুমট অন্ধকার ঘরে ।একটু আলো আতাতায়ী আর লাশের দিকে তাক করা ।আতাতায়ী রক্ত একটু হাতে মেখে দেয়ালে আকা শুরু করলো ।একটা বড় শেয়ালের মুখ একে দিলো আতাতায়ী ।
দ্বিতীয় দৃশ্যঃ ( অফিস রুম ,টেবিলের একপাশে বস বসে আছে রাগের ভঙ্গীতে আরেকপাশে শাফিন মাথা নিচু করে আছে ।)
বসঃকতবার বোঝাবো তোমাকে এই যুগের মানুষ রোমান্টিক গল্প চায় ।এসব থ্রিলার মিস্ট্রি কেও দেখে না ।কথাটা কি মাথায় ঢুকে না ?
শাফিনঃ কিন্তু স্যার একবার অন্তত পড়ে দেখুন স্যার স্ক্রিপ্টা । আমার বিশ্বাস ভালো লাগবে স্যার ।আমার লিখা এ পর্যন্ত বেস্ট স্ক্রিপ্ট এটা স্যার ।আমি গত দুই মাস টানা না ঘুমিয়ে এই স্ক্রিপ্ট লিখেছি ।এইখানে স্যার যেমন থ্রিল দিয়েছি আর যেই মিস্ট্রি দিয়েছি স্যার বর্তমানের কোনো স্ক্রিপ্ট রাইটার এতো এফোর্ট দিতে পারবে স্যার ।আর স্যার এই মিস্ট্রির সাথে স্যার মিশোরীয় হিস্ট্রি আর বর্তমান যুগের কন্সপাইরেসিও দিয়েছি স্যার ।প্লিজ স্যার আমার স্বপ্নের প্রজেক্ট এটা স্যার ।
বসঃ তোমার স্বপ্নের প্রোজেক্ট দিয়ে আমি কি করবো ? এতে কি আমার টি আর পি বাড়বে ? জানো টি আর পি বাড়ে কিসে ? আচ্ছা বলোতো তোমার এই স্ক্রিপ্টে নায়িকা কয়জন ? ছেলে পরিবারের বড় না ছোটো ? মেয়ের বিয়ে কি ছেলের সাথে হবে কি হবে না ?
শাফিনঃ মানে স্যার ? এমন কিছু নেই স্ক্রিপ্টে ।কিন্তু ।
বস ঃ কোনো কিন্তু নেই ।লাস্ট যেই নাটকটা সবথেকে বেশী টি আর পি নিয়েছে সেটা বড় ছেলে ,ওই অপূর্ব আর মেহজাবিনের .২ য় টি আর পি বেশী লেডি কিলারের ,ওই নিশো আর নাবিলার ।সবগুলোই রোমান্টিক আর সেন্টিমেন্ট ।মানুষ এইগুলো খায় ।তোমার এইসব থ্রিলার ফিলার মানুষ ব্যুঝবে না ।তোমাকে আগেও বলেছিলাম রোমান্টিক গল্প নিয়ে কাজ করো ।এখুনু বলছি রোমান্টিক গল্প লিখে আনবে পরের বার ।যদি তানা পারো তাহলে মনে হয় না এই অফিসে তোমার কোনো দরকার আছে ।বুজেছো আমার কথা ?
শাফিনঃজ্বি স্যার বুঝেছি ।
বসঃ তাহলে দাঁড়িয়ে আছো কেনো ।যাও ।নিজের কাজে লেগে পড়ো ।
শাফিনঃ জ্বি স্যার ।
( বলেই বসের রুম থেকে বেরিয়ে দরজার সামনে দাড়ালো শাফিন ।বড় এক দীর্ঘশ্বাস মনের অজান্তেই বেড়িয়ে আসে শাফিনের ।পকেট থেকে টিস্যু বের করে ঘাম মুছে দরজার পাশের ডাস্টবিনে ফেললো ।ডাস্টবিনে ফেলার সময় ডাস্টবিনের ভেতরে একটু উকি দেয় শাফিন ।একটা স্ক্রিপ্ট ।ডাস্টবিন থেকে বের করে স্ক্রিপ্টটি ।স্ক্রিপ্টের প্রথম পাতায় বড় করে লিখা “ অজ্ঞান্ধ ।লেখকঃ শাফিন রহমান ।“ ।স্ক্রিপটা নিয়ে একবার পেছন ঘরে বসের কেবিনের দরজার দিক তাকালো ।তারপর মাথা নিচু করে স্ক্রিপ্ট নিয়ে হাটতে হাটতে অফিস থেকে বেড়িয়ে যায় শাফিন ।)
তৃতীয় দৃশ্যঃ( এক নির্জন মাঠে আগুনের পাশে শাফিন দাঁড়ানো ।একের পর এক স্ক্রিপ্টের পাতা আগুনে ছুড়ছে।শেষে স্ক্রিপ্তের প্রথম পাতার দিক তাকিয়ে বড় নিশ্বাস ফেলে সেটাও আগুনে ছুড়ে মারে ।আগুনের দিক তাকিয়ে চোখের জল ফেলে শাফিন ।হঠা ৎ ফোন বেজে ওঠে শাফিনের ।কলিগের নম্বার ।রিসিভ করে শাফিন ।)
শাফিনঃ হ্যালো সুমিত ।বল ।
সুমিতঃ বস আজ রাতে পার্টি দিয়েছে ।সব কর্মচারীদের আসতে বলেছে ।
শাফিনঃ কিসের পার্টি ।?
সুমিতঃ আরেহ সজীবদার নাটক ,ওই যে “ মধ্য বিত্তের ভালোবাসা” এইবার টি আর পিতে হাইয়েস্ট ।এমনকি এই টি আর পি এখন বাংলাদেশের যেকনো চ্যানেলের জন্য সর্বচ্চ ।তাই বস পার্টি দিচ্ছে ।তুইস আসবি তো ?
শাফিনঃ নারে ।আমি আসতে পারবো না ।
সুমিত কেন?
শাফিনঃ এসব অখাদ্য লুতুপুতু মার্কা থার্ড ক্লাস প্রেমের গল্পের নাটকের সেলিব্রেশনে যাবো না ।বসকে বলে দিস আমার শরীরব অসুস্থ্য ।
সুমিতঃ আচ্ছা ।
( ফোন কেটে দেয় সুমিত ।কান থেকে ফোন নামিয়ে কিছুক্ষন স্ক্রিনের দিক তাকায় ।তারপর জোরে মাটিতে ফোন আছাড় দেয় শাফিন।আকাশের দিক তাকিয়ে চি ৎ কার দিয়ে ওঠে শাফিন ।)
চতুর্থ দৃশ্যঃ( ঘড়ির এলার্মে ঘুম ভাঙ্গে শাফিনের ।হাত বাড়িয়ে ঘড়ি বন্ধ করে ।বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে আয়নার সামনে ব্রাশ করতে থাকে কিছুক্ষন ।পরাটা আর ডিম ভেজে নিজের বিছানায় এসে টিভি চালায় ।কয়েকটা চ্যানেল ঘোরার পর এক খবরের চ্যানেলে রাখে ।খেতে খেতে খবর শুনতে থাকে শাফিন ।)
খবরের শিরোনাম “ আতাতাত্যীর হাতুড়ির আঘাতে অভিনেতা সুমন খুন ।হাতুরি দিয়ে মুখ থেতলে হত্যা করা হয় প্রায়ত নায়ক সুমনকে ।সুমনের রুমের দেয়ালে রক্ত দিয়ে একটি শেয়ালের মুখ একে দিয়েছে আতাতায়ী “ ।
( শেয়ালের মুখ স্ক্রিনে ভেসে উঠতেই পাশ থেকে ফোন তুলে টিভির স্ক্রিনের শেয়ালের ছবি ফোনে তুলে নিলো শাফিন ।খাবার রেখেই সেই ছবিটি পাশে রেখে টেবিলে বসে শেয়ালের মুখটি খাতায় আকলো ।কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো খাতায় আকা শেয়ালের মুখের দিকে ।তারপর নিচে লিখলো ।দেবতা এনুবিস ।মিশরীয় মৃত্যের দেবতা ।কিন্তু এটা আকার মানে কি হতে পারে ? মিরোশীয় মিথোলজি অনুযায়ে উনাকে অভিসাপের দেবতাও বলা হয়ে থাকে ।যিনি মানুষের দেয়া অভিসাপ গুলো কবুল করে সেগুলো পূরণ করে ।হঠা ৎ ফোন বেজে ওঠে শাফিনের ।আননোন নম্বার ।রিসিভ করে শাফিন ।
শাফিনঃ হ্যালো কে ?
এনুবিস ঃ আমি দেবতা এনুবিস ।কত কদিন তোমার আত্মার সাথার কথা হয়েছে ।সে একজনকে বার বার অভিসাপ দিচ্ছে ব।সে একজনের মৃত্যু চাচ্ছে ।এখন আমি সেই অভিসাপটি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছি ।
শাফিনঃ মানে কি এতার ।ফাজম্লামি করছো সকাল বেলা মিয়া ।
এনুবিসঃ আমি দেবতা এনুবিস ।আমি কখোনো মানুষের সাথে ফাজলামো করি না ।আমি শুধু তাদের মনের অভিসাপ গুলোর পরিণতি দেই ।তুমি টিভিতে যেই খুনের খবর দেখছিলা সেটা
শাফিনঃ তার মানে ্্্্্,
এনুবিসঃ হ্যা আমিই ।এখন জলদি তোমার মনের ইচ্ছা বলো ।
শাফিনঃ এ এ হ্যা ,আমি চাই আমার বস ঠিক এইভাবেই মরুক ।হারামজাদা একটা ।
এনুবিসঃ আগামী ২৪ ঘন্টার ভেতর কাজ হয়ে যাবে ।
(*বলেই ফোন কেটে দেয় আনাদোল ।ফোনের স্ক্রিনের দিক তাকিয়ে থাকলে কিছুক্ষন শাফিন ।)
পঞ্চম দৃশ্যঃ গুমট অন্ধকার ।বস চেয়ারের সাথে বাধা ।মুখটাও রুমাল দিয়ে বাধা ।আতাতায়ী একটা হাতুরী নিয়ে এগিয়ে আসছে বসের দিকে ।বস ছটফট করতে থাকে ।দেয়ালে দুটি ছায়ামূর্তি দেখা যায় ।একটা ছায়া মূর্তি হাতুরি দিয়ে আরেকটা ছায়ামূর্তিকে আঘাত করেই যাচ্ছে ।কিছুক্ষন পর বসের নিথর দেহ ফ্লোরে নুইয়ে পড়ে ।রক্ত বেয়ে আতাতায়ীর পায়ের জুতোয় লাগে ।আতাতায়ী হাটুগেরে রক্ত নিয়ে দেয়ালে একটা শেয়ালের মুখ আকতে থাকলো ।আকা শেষে রুম থেকে বের হয়ে যাবার আগে সিসি টিভি স্ক্রিনের দিক তাকিয়ে নিজের মুখের মাস্ক সরিয়ে এক নৃশংস হাসি দেয় ।


0 Comments
Give your valuable feedback !